‘ওরিয়েন্টালিজম’ তথা প্রাচ্যবাদ সম্পর্কে অনেকের সম্যক ধারণা নেই। অথচ প্রাচ্যবাদের প্রভাব আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, কলা, আইন, প্রশাসন, রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে সচেতন কিংবা অবচেতনভাবে প্রভাবিত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ। অন্যান্য দেশে এ বিষয়ে যেমন গণসচেতনতা রয়েছে এর ভগ্নাংশও নেই আমাদের দেশে। মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম, পবিত্র কুরআন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত অধিকাংশ ভুলধারণার জন্ম প্রাচ্যবাদের গর্ভে।‘ওরিয়েন্টালিজম ও ইসলাম’ গ্রন্থে প্রাচ্যবাদের বিভ্রান্তি সম্পর্কে হাজারো যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব মিলবে।
প্রকাশকের কথা
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ। ‘ওরিয়েন্টালিজম ও ইসলাম’ শীর্ষক গ্রন্থটি প্রকাশিত হলো। পাশ্চাত্যের যেসব প-িত ইসলাম বিষয়ক স্কলার হিসেবে ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে গবেষণা করেন তাদের সেই চর্চাই ওরিয়েন্টালিজম হিসেবে পরিচিত। উসমানী সালতানাতের অবসান ও মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় পাশ্চাত্যের দখলদারিত্ব ও অধীনস্থ হওয়ার পর থেকে মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা-সংস্কৃতি শাসন-রাজনীতি, আইন ও কৃষ্টি সবক্ষেত্রেই দখলদারদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এক বাক্যে বলতে গেলে মুসলিম উম্মাহর নিজ সত্তা হারিয়ে যায়। পাশ্চাত্য দর্শন মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। ফলে উনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই কথিত আধুনিকতামনস্ক সংস্কারবাদী সিংহভাগ মুসলমান পাশ্চাত্য দর্শনের আলোকে নিজেদের জীবন-জগৎ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করে। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম সমাজে আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবোধ ও ইসলাম নির্দেশিত নৈতিকতা গুরুত্ব হারায়।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে পাশ্চাত্যের চিন্তাদর্শনের প্রভাব এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করে যে, মুসলিম উম্মাহর বড়-অংশ পাশ্চাত্য স্কলারদের দেখানো আয়নায় ইসলামের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত, ইতিহাস, কৃষ্টিকালচার ও জীবনবোধ দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা ইসলামের প্রকৃতরূপ ও বাস্তবতা এবং আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবোধের জীবন্ত নমুনাগুলো তালাশের প্রয়োজন বোধ করে না।
এমতাবস্থায় উম্মাহর অগ্রসর চিন্তার অধিকারী মনীষীগণ পশ্চিমা প-িতদের সূক্ষ্ম ইসলামবিদ্বেষ ও ক্ষতিকর দিকগুলো উন্মোচন করে অবচেতন মুসলিম উম্মাহকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। এ সম্পর্কে বহু গ্রন্থ ও চিন্তাপ্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে পাশ্চাত্য দর্শন ও ওরিয়েন্টালিস্টদের প্রভাব সর্বগ্রাসী।
ওরিয়েন্টালিজমের পরিচয়, স্বরূপ উন্মোচন, অতঃপর ক্ষতিকর দিকটি বাংলাভাষায় তথ্যপ্রমাণ দিয়ে উপস্থাপন করেছেন বিদগ্ধ গবেষক ড. মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন তাঁর রচিত ‘ওরিয়েন্টালিজম ও ইসলাম’ শীর্ষক গ্রন্থে। ইসলাম সম্পর্কে মনোযোগী যে কোনো পাঠক এ গ্রন্থ পাঠে সমৃদ্ধ হবেন। অনুধাবন করতে পারবেন উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও মানবিকতার আড়ালে পাশ্চাত্যের প-িতগণ কীভাবে অবচেতন মুসলিমদের মনোজগতে বিভ্রান্তির বীজ বপন করেন। মহান আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ও বাংলাভাষী মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্যের সূক্ষ্ম বিভ্রান্তিকর প্রণোদনা, প্রচারণা ও জীবনদর্শন থেকে হেফাজত করুন, সচেতন হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।