প্রকাশিত হয়েছে খুতবা বিষয়ক গ্রন্থ “সমকালীন খুতবা”

06:00:00

2433 বার পঠিত


প্রকাশিত হয়েছে খুতবা বিষয়ক গ্রন্থ “সমকালীন খুতবা”

اَلْخُطُبَاتُ الْمُعَاصٍرَةُ সমকালীন খুতবা
ড. মাওলানা মোহা. মঞ্জুরুল ইসলাম

প্রকাশকের কথা

সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা‘আলার, যিনি মানুষকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, জটিল  বিষয়গুলো অন্যের নিকট প্রকাশের ক্ষমতা দিয়েছেন, যিনি মানুষের চলার পথের যাবতীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার পথ উম্মোচন করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক পৃথিবীর সকল মানুষের রাহবার সায়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মদ স.-এর প্রতি; যিনি আল্লাহ্র নির্দেশে সকল হুকুম-আহকাম উম্মাতের নিকট খুৎবাহ্ ও ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে পৌঁছিয়েছেন। তাঁর অনুসরণ করেছেন মাক্কী, মাদানী, মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ, তাঁদের সকলের প্রতি রহমত নাযিল হোক।
যুগে যুগে নবী রাসূলগণ খুৎবাহ বা ওয়াজ উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার জন্যে, সুন্দর ইসলামী সমাজ গঠনের জন্যে মুসলিম মনীষীগণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে সম্মানিত আলিম-উলামা ও খতীব সাহেবদের খিদমাত অতুলনীয়। তাদের সুচিন্তিত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ দিক নির্দেশনা শান্তিময় সুশৃংখল সমাজ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যুগের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ ও সমস্যাবলি নিরসনে তাদের অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা পথপ্রদর্শকের ভূমিকা রাখে। কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে তাদের পথনির্দেশনার জন্য প্রয়োজন একটি তথ্যনির্ভর গ্রন্থ, যা একটি আদর্শ মুসলিম সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই গুরুদায়িত্ব পালনে পদক্ষেপ নিয়েছেন ড. মাওলানা মোহা. মঞ্জুরুল ইসলাম। তার এই খুৎবাহ দ্বারা সম্মানিত খতীব, ইমাম, ওয়ায়েজ, সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকলমহল সমভাবে উপকৃত হবে বলে আমরা মনে করি। আল্লাহ্ তা‘আলা এই প্রকাশনার সাথে জড়িত সকলকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন। আমীন!!  

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
জেনারেল সেক্রেটারি
বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার

 

মুখবন্ধ
আলহামদুল্লিাহ, ওয়াসালাতু লি রাসূলিল্লাহ।
মানুষ মানুষের জন্যে। মানুষের উপকার ও কল্যাণের কাজেই মূলত মানুষের মহত্ব ফুটে ওঠে, মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাধারণত মানুষের মাধ্যমেই মানুষের অসংখ্য কল্যাণ ও উপকার সম্পাদন করে থাকেন। একজন মানুষ যেমন মানুষ ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না তদ্রƒপ মৃত্যুর পরও তার দাফন-কাফন ইত্যাকার কাজও মানুষ ছাড়া হয় না।
মানুষের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হতে হয় আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব। কিন্তু সব মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন দেখা যায় না। তারা বুঝতে চায় না তাদের জন্ম ও সৃষ্টি রহস্য, তাদের আদি-অন্ত, বর্তমান-ভবিষ্যত, দুনিয়া-আখিরাত। এসব অবোঝ মানুষদের বোঝানোর জন্যে মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী রাসূলগণ পথহারা মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে সুপথে চলার পথ নির্দেশ করেছেন।
সেই নবীওয়ালা কাজই রাসূলের পরবর্তী যুগের দাঈ, মুবাল্লিগ তথা উলামায়েকিরাম করে আসছেন। কেউবা ওয়াজের মাধ্যমে, কেউ জুমুআর খুতবায়, কেউ ক্লাসের দরসে, কেউ দাওয়াতি কাফেলার মাধ্যমে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সাধারণ মানুষজনকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রদর্শিত সুন্দর ও শান্তির পথে আহবান করেন।
দাঈদের এই দাওয়াতের জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান, বৈষয়িক প্রজ্ঞা, কুরআন ও হাদীসের দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সকলের পক্ষে পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তাদের দাওয়াত ও ওয়াজ নসীহতে মানুষ আকর্ষণ বোধ করে না। অনভিজ্ঞদের প্রজ্ঞাহীনতা ও দূরদর্শিতাশুন্য দাওয়াত দীনের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ ডেকে আনে, মানুষ দীনের প্রতি আকর্ষণের বিপরীতে বিকর্ষণ অনুভব করে। ফলে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয় শ্রোতা ও দর্শক মণ্ডলী; যা ভাবতেও কষ্ট লাগে।
ড. মাওলানা মোহা: মঞ্জুরুল ইসলাম আশৈশব দীনি পরিবেশে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে কওমী নিসাবের দাওরায়ে হাদীস, আলিয়া নিসাবের কামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের øাতকোত্তর ডক্টরেট ডিগ্রীধারী।
পেশাগত কারণে তাকে দীনি বক্তৃতার চর্চা করতে হয়। তা ছাড়া শিক্ষাজীবন থেকেই বক্তৃতা, উপস্থাপনের রীতি ও মননশীলতার বিষয়টি তাকে যথেষ্ট ভাবাতো।
সেই ভাবনা থেকেই তিনি রচনা করেছেন ‘আল-খুতুবাতুল মুআসিরা’ বা সমকালীন খুতবা গ্রন্থ।
এ গ্রন্থে ৫টি অধ্যায়ে ৬২টি বিষয়ের বক্তব্য সন্নিবেশিত হয়েছে। যারা বয়ান বক্তৃতা করেন, তারা যদি মানুষের সহজাত প্রয়োজনীয়তা, উপস্থিত সমস্যাবলি, স্থান-কাল ও যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব আল্লাহ রাসূলের নির্দেশনার আলোকে উপস্থাপন করেন, তাদের বক্তব্যে ইহজীবনে ধর্মচর্চার মাধ্যমে মানুষ পরকালের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেই সাথে ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান তাও প্রতিফলিত হয়।
ড. মাওলানা মোহা: মঞ্জুরুল ইসলাম যথেষ্ট চেষ্ঠা সাধনা করে ৫টি অধ্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৬২টি বিষয় সন্নিবেশন করেছেন; যা যে কোন পাঠককে আকৃষ্ট করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিশেষ করে মাধ্যমিক থেকে øাতক-øাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অনেক প্রয়োজন পূরণ করবে এ গ্রন্থ। সম্পাদনা পরিষদের সদস্য সচিব শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল গোটা রচনাবলীতে উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসগুলোর বিশুদ্ধতা যাছাই করেছেন। নি:সন্দেহে এতে করে খুতবার বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই গ্রন্থে উপস্থাপিত বিষয়গুলো খতীবদের শুধু নয় সকল মানুষকেই মুগ্ধ ও আমলের দিকে আকৃষ্ট করবে বলে আমরা আশাবাদী। এ লক্ষ্যেই ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার’ এ গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছে। মহান আল্লাহ এ গ্রন্থ এবং এর সাথে জড়িত সকলকে কবুল করুন। আমিন।

শহীদুল ইসলাম
সভাপতি
সম্পাদনা পরিষদ

প্রারম্ভিক কথা
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ্র জন্য, যিনি সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। যিনি মানুষের হিদায়াতের জন্য দান করেছেন জীবনবিধান আল-কুরআন। সালাত ও সালাম মহান নবীর উপর, যিনি সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ পথে দাওয়াত দানকারী । অতঃপর তাঁদের উপর সালাম ও দু‘আ, যাঁরা যুগে যুগে আল্লাহ্র দীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন এবং যাঁরা কিয়ামত অবধি তা করবেন।
ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও নাজাত প্রাপ্তির লক্ষে আল্লাহ মনোনীত বিধি-বিধান সমৃদ্ধ পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলামের পথ নির্দেশিকা হিসেবে দু‘টি গ্রন্থ রাসূলুুল্লাহ্ স. আমাদের জন্য রেখে গেছেন। ইসলামের সুমহান আবেদনগুলো সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের নিকট পৌঁছানোর একটি মাধ্যম হলো সম্মানিত ইমাম ও খতীব সাহেবদের উপস্থাপিত প্রতি সপ্তাহের জুমু‘আর দিনের খুৎবাহ্ বা বক্তৃতা। আদর্শ সমাজ গঠনে দেশের সম্মানিত খতীবগণের দায়িত্ব অপরিসীম। কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে আহরিত তথ্যভিত্তিক জ্ঞান যেন লোক সমাজে উপস্থাপন করতে পারেন সে জন্য একটি গাইড লাইন হিসেবে এ খুৎবাহ্-গ্রন্থ রচনা প্রয়াস। পেশাগত কারনেই বিভিন্ন সময়ে জনগণের সামনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করতে হয়। সেই হ্যান্ডনোটগুলো একত্রিত করায় তা একটি বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থে পরিণত হয়। হ্যান্ডনোটকে গ্রন্থাকারে প্রকাশের বিষয়টি অবহিত করলে কিছু সংখ্যক আলিম, মান্যবর ব্যক্তিবর্গ, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব শুভানুধ্যানুযায়ী দারুনভাবে উৎসাহ দিলেন। তাদের ঐকান্তিক আগ্রহ ও অনুপ্রেরণায় সদকায়ে জারিয়ার এ কাজটি সম্পন্ন করা সহজ হলো। খুৎবার গ্রন্থটি তথ্যনির্ভর করে উপস্থাপনের জন্য প্রতিটি শিরোনামের অধীনে কুরআনের সূরার নাম, সূরার ক্রমিক নম্বর এবং আয়াত নম্বর এবং হাদীসের ক্ষেত্রে মূল গ্রন্থের নাম ও হাদীস নম্বর উল্লেখ করেছি। যাতে করে পাঠক, গবেষক, সর্বোপরি অনুসন্ধিৎসু মানুষ বিষয়টি সহজে খুঁজে বের করতে পারেন। যেখানে মূল গ্রন্থের সূত্র উল্লেখ করিনি সেখানে মাধ্যমিক সূত্র (ঝবপড়হফধৎু ঝড়ঁৎপব)-এর উদ্ধৃতি দিয়েছি। সম্মানিত খতীব সাহেবদের সুবিধার্থে এবং মুসল্লীদের সংশ্লিষ্ট পাঠটি আমলযোগ্য করার জন্যে পয়েন্ট আকারে উত্থাপন করেছি। এ ক্ষেত্রে ঘটনা বা গল্প পরিহারের চেষ্টা করা হয়েছে। সমাজের চাহিদানুযায়ী যেন খতীবগণ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা উপস্থাপন করতে পারেন, সে জন্য কোন মাসের অধীনে শিরোনাম লিখা হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের উপসংহার সম্মানিত খতীব সাহেবদের মর্জির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গ্রন্থের শেষে কয়েকটি আরবী খুৎবা যুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু ইসলাম মানুষের কল্যাণের ধর্ম তাই ইবাদত, লেনদেন, সামাজিক শিষ্টাচার, চারিত্রিক দিকগুলোর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। পাঁচটি অধ্যায়ের অধীনে বিষয়গুলোর উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলাম শাশ্বত ধর্ম। কিয়ামত অবধি এ ধর্ম টিকে থাকবে। এ প্রয়োজনীয়তাটি সামনে রেখে এ গ্রন্থে যুগপোযোগী  বিষয়ও সন্নিবেশিত করেছি। যা যুগের বিভিন্ন চাহিদাও পূরণ করবে, ইনশাআল্লাহ। এ জন্যই এ খুৎবা গ্রন্থটির নাম দেয়া হয়েছে ‘আল-খুতুবাতুল মু‘আসিরাত বা সমকালীন খুৎবাহ। এ গ্রন্থ স¤পাদনা সম্পন্ন করার জন্যে আবারো মহান আল্লাহ্র অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। গ্রন্থ প্রকাশে যারা সহযোগিতা করেছেন, প্রকাশনা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষভাবে øেহাস্পদ মাও. মো. উমর ফারুক-এর সহযোগিতা উল্লেখ করার মত। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের সকলকে জাযায়ে খায়ের দান করুন এবং আখিরাতে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। সবশেষে অনেক সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও বইটিতে কিছু ক্রটি-বিচ্যুতি ও মুদ্রণ প্রমাদ পরিলক্ষিত হলে সুহৃদয় পাঠকবৃন্দের মূল্যবান পরামর্শ কামনা করছি। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে দীনের খিদমতে কবুল করুন। -আমীন!!
-ড. মোহা. মঞ্জুরুল ইসলাম