এডভোকেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রহঃ এর ‘জীবন ও কর্ম শীর্ষক’ আলোচনা সভা

Spread the love

এডভোকেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রহঃ এর ‘জীবন ও কর্ম শীর্ষক’ আলোচনা সভা

“এডভোকেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ছিলেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ক্ষণজন্মা একজন আইনজীবী”

২৬শে জুলাই শনিবার-২০২৫,বাংলাদেশ ল’রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার মিলনায়তনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ ইসলামিক ল’রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা এডভোকেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রহঃ এর ‘জীবন ও কর্ম শীর্ষক’ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যাংকার জনাব নুরুল ইসলাম খলীফা।
ইসলামিক ল’রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আ.ক.ম আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলামের পরিচালনায় উক্ত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন,সিনিয়র সাংবাদিক তালহা বিন নজরুল, ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ইভিপি জিল্লুর রহমান পাটোয়ারী, এডভোকেট আব্দুল বাতেন, এডভোকেট সাজ্জাদ সরোয়ার, এডভোকেট নুরুজ্জামান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কামরুজ্জামান শামীম, ড. রুহুল আমীন রব্বানী, ড. এমদাদুল হক হেলালী, বিশিষ্ট লেখক আলী আহমাদ মাবরুর, জনাব এসএম আব্দুল্লাহ প্রমুখ। সভায় বক্তারা মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবনের নানা দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। সভার শুরুতে বিশিষ্ট ব্যাংকার জিল্লুর রহমান পাটোয়ারী মরহুমের জীবন ও কর্মের প্রধান কীর্তিগুলো উপস্থাপন করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম খলীফা বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব, যিনি একই সাথে সকল অংগনেবিচরণ করার বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। বিশেষ করে আইন অংগনে দাপটের সাথে নিজের ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের বিপরীতে ইসলামী আইনকে কিভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা যায় সে ব্যাপারে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল আমৃত্যু। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের আলেমসমাজকে কিভাবে ইসলামের জন্য কাজ করতে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে এডভোকেট নজরুল ইসলাম ছিলেন সদা তৎপর। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং সকলকে মরহুমের রেখে যাওয়া কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আ ক ম আব্দুল কাদের বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সাহসিকতা, প্রবল কর্মস্পৃহা এবং দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত লোক বাছাই করা। তিনি বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম সবসময় যেকোনো কাজের উদ্যোগ নিলে সেটার জন্য উপযুক্ত কর্মপদ্ধতি প্রণয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টর থেকে উক্ত দায়িত্ব পালনের উপযোগী ব্যক্তিকে বাছাই করতেন এবং নিজে সাথে থেকে উদ্যোগকে সফল করতে প্রচেষ্টা চালাতেন। ইসলামী ফিকহের ব্যাপারে এডভোকেট নজরুল ইসলামের বিশেষ মনোযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলামের বড় স্বপ্ন ছিল সমাজের প্রতিটি স্তরে কিভাবে সঠিক বিচার নিশ্চিত করা যায়, এবং সে কারণে ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টারের মাধ্যমে ফিকহের উপর অসাধারণ সব টেক্সট তিনি প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম সবসময় আইন অংগনের দারস্থ হওয়া সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কথা চিন্তা করতেন এবং এ ব্যাপারে তিনি বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলী ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের কাছে সবসময় আবেদন রাখতেন। ব্যারিস্টার ইমরান বলেন, আইন অংগনে ইসলামের পক্ষে স্পষ্ট উচ্চারনের জন্য এডভোকেট নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রখ্যাত। এ সময় বাংলাদেশের আইন অংগনের এক বিখ্যাত ফতওয়া মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মামলার মাধ্যমে প্রাপ্ত রায় বাংলাদেশের সকল ধর্মের মানুষের জন্য যুগ যুগ ধরে চলে আসা এক বড় সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে, যার সুফল দীর্ঘস্থায়ী। মরহুমের রেখে যাওয়া কাজ এগিয়ে নিতে ও ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টারের পাশে দাঁড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম ছিলেন আইনঙ্গনের সকলের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব, ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ একজন আইনজীবী। ইসলামাইজেশন অব ল’ এর ব্যাপারে তাঁর অক্লান্ত চেষ্টা সকলের কাছে তাঁকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল।ল’ রিসার্চ সেন্টারের কার্যক্রম আরোগতিশীল করার মাধ্যমে আমাদের সকলের কর্তব্য তার এই মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক আলী আহসান মাবরুর তাঁর বক্তব্যে মরহুমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, সময়ে সময়ে অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে মজলুম বিচারপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এডভোকেট নজরুল ইসলাম সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। কিছু মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম সেসকল মামলায় বিনা স্বার্থে আদালতে দাঁড়িয়েছেন এবং বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করেছেন। তিনি মরহুমের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টারকে ভবিষ্যতেও মজলুমবিচারপ্রার্থীদের জন্য কাজ অব্যহত রাখার জোর অনুরোধ জানান।
এডভোকেট নজরুল ইসলামের বড় ছেলে সিনিয়র সাংবাদিক তালহা বিন নজরুল তাঁর বক্তব্যে মরহুমের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি এডভোকেট নজরুল ইসলাম আরও বেশি গুরুত্ব দিতেন তাঁর কাজের উপর। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অদম্য, আত্মত্যাগী ও সাহসী । প্রচলিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলামের সকল বিধানকে কিভাবে সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য ভাবে উপস্থাপন করা যায় সে ব্যাপারে সদা বিচলিত থাকতেন। তিনি সকলের কাছে মরহুমের জন্য দুআ কামনা করে তাঁর রেখে যাওয়া কাজকে সামনে এগিয়ে যেতে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা শহীদুল ইসলাম মরহুমের প্রতিষ্ঠিত ল’ রিসার্চ সেন্টারের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে সর্বসম্মতিক্রমে এডভোকেট নজরুল ইসলামের বড় ছেলে তালহা বিন নজরুলকে সদস্য সচিব করে “এডভোকেট নজরুল ইসলাম ট্রাস্ট” গঠনের প্রস্তাব গৃহিত হয়। পরিশেষে মরহুমের রুহের মাগফিরাতের জন্য মুনাজাত করা হয়।
Scroll to Top