সমকালীন খুতবা/ড. মাওলানা মোহা: মঞ্জুরুল ইসলাম
আলহামদুল্লিাহ, ওয়াসালাতু লি রাসূলিল্লাহ।
মানুষ মানুষের জন্যে। মানুষের উপকার ও কল্যাণের কাজেই মূলত মানুষের মহত্ব ফুটে ওঠে, মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। আল্লাহ রাববুল আলামীন সাধারণত মানুষের মাধ্যমেই মানুষের অসংখ্য কল্যাণ ও উপকার সম্পাদন করে থাকেন। একজন মানুষ যেমন মানুষ ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না তদ্রূপ মৃত্যুর পরও তার দাফন-কাফন ইত্যাকার কাজও মানুষ ছাড়া হয় না।
মানুষের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হতে হয় আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব। কিন্তু সব মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন দেখা যায় না। তারা বুঝতে চায় না তাদের জন্য ও সৃষ্টি রহস্য, তাদের আদি-অন্ত, বর্তমান-ভবিষ্যত, দুনিয়া-আখিরাত। এসব অবোঝ মানুষদের বোঝানোর জন্যে মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী রাসূলগণ পথহারা মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে সুপথে চলার পথ নির্দেশ করেছেন।
সেই নবীওয়ালা কাজই রাসূলের পরবর্তী যুগের দাঈ, মুবাল্লিগ তথা উলামায়েকিরাম করে আসছেন। কেউবা ওয়াজের মাধ্যমে, কেউ জুমুআর খুতবায়, কেউ ক্লাসের দরসে, কেউ দাওয়াতি কাফেলার মাধ্যমে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সাধারণ মানুষজনকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রদর্শিত সুন্দর ও শান্তির পথে আহবান করেন।
দাঈদের এই দাওয়াতের জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান, বৈষয়িক প্রজ্ঞা, কুরআন ও হাদীসের দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সকলের পক্ষে পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তাদের দাওয়াত ও ওয়াজ নসীহতে মানুষ আকর্ষণ বোধ করে না। অনভিজ্ঞদের প্রজ্ঞাহীনতা ও দূরদর্শিতাশুন্য দাওয়াত দীনের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ ডেকে আনে, মানুষ দীনের প্রতি আকর্ষণের বিপরীতে বিকর্ষণ অনুভব করে। ফলে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয় শ্রোতা ও দর্শক মণ্ডলী; যা ভাবতেও কষ্ট লাগে।
ড. মাওলানা মোহা: মঞ্জুরুল ইসলাম আশৈশব দীনি পরিবেশে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে কওমী নিসাবের দাওরায়ে হাদীস, আলিয়া নিসাবের কামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডক্টরেট ডিগ্রীধারী।
পেশাগত কারণে তাকে দীনি বক্তৃতার চর্চা করতে হয়। তা ছাড়া শিক্ষাজীবন থেকেই বক্তৃতা, উপস্থাপনের রীতি ও মননশীলতার বিষয়টি তাকে যথেষ্ট ভাবাতো।
সেই ভাবনা থেকেই তিনি রচনা করেছেন ‘আল-খুতুবাতুল মুআসিরা’ বা সমকালীন খুতবা গ্রন্থ।
এ গ্রন্থে ৫টি অধ্যায়ে ৬২টি বিষয়ের বক্তব্য সন্নিবেশিত হয়েছে। যারা বয়ান বক্তৃতা করেন, তারা যদি মানুষের সহজাত প্রয়োজনীয়তা, উপস্থিত সমস্যাবলি, স্থান-কাল ও যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব আল্লাহ রাসূলের নির্দেশনার আলোকে উপস্থাপন করেন, তাদের বক্তব্যে ইহজীবনে ধর্মচর্চার মাধ্যমে মানুষ পরকালের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেই সাথে ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান তাও প্রতিফলিত হয়।
ড. মাওলানা মোহা: মঞ্জুরুল ইসলাম যথেষ্ট চেষ্ঠা সাধনা করে ৫টি অধ্যায়ে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ৬২টি বিষয় সন্নিবেশন করেছেন; যা যে কোন পাঠককে আকৃষ্ট করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিশেষ করে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অনেক প্রয়োজন পূরণ করবে এ গ্রন্থ। সম্পাদনা পরিষদের সদস্য সচিব শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল গোটা রচনাবলীতে উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসগুলোর বিশুদ্ধতা যাছাই করেছেন। নিঃসন্দেহে এতে করে খুতবার বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই গ্রন্থে উপস্থাপিত বিষয়গুলো খতীবদের শুধু নয় সকল মানুষকেই মুগ্ধ ও আমলের দিকে আকৃষ্ট করবে বলে আমরা আশাবাদী। এ লক্ষ্যেই ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার’ এ গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছে। মহান আল্লাহ এ গ্রন্থ এবং এর সাথে জড়িত সকলকে কবুল করুন। আমিন।
বিস্তারিত জানতে দেখুন-সমকালীন খুতবা সূচিপত্র