ইসলামি ও আরবি বিষয়ে একাডেমিক গবেষণার রীতি ও পদ্ধতি

Spread the love

ইসলাম একটি চিরন্তন ও সজীব জীবনধর্ম। নিজের অলঙ্ঘনীয় মৌলিকত্ব অক্ষুন্ন রেখে সময় ও কালের সকল পরিবর্তন পরিবর্ধনকে আত্মস্থ ও ধারণ করে কেয়ামত পর্যন্তই ইসলাম মানব ও সৃষ্টিকুলের কল্যাণ নিশ্চিত করার সক্ষমতা রাখে। এটি এমন এক ব্যবস্থা যা নিত্য পরিবর্তনশীল যুগের প্রয়োজন ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে দীনের আদর্শিকতা ও আল্লাহর দাসত্বের বন্ধনে কোন প্রকার ব্যত্যয় না ঘটিয়েও স্থান কাল পাত্রের উপযোগিতা অনুযায়ী নিজেকে অনুসরণীয় আদর্শরূপে উপস্থাপনে সক্ষম।

বর্তমানে জ্ঞান বিজ্ঞানের যে উন্নয়ন ঘটেছে, কুরআনুল কারীমে তার ভিত্তি ও নির্দেশনা রয়েছে। কুরআনকে কেন্দ্র করেই ছিল পূর্বেকার মুসলমানদের জ্ঞানসাধনা। তারা জগৎকে দেখাতে পেরেছিলেন আবিষ্কার ও উন্নয়নের মহাসড়ক। ফলে তৎকালিন মুসলমান মনীষীগণ ছিলেন জ্ঞান ও বিজ্ঞানে পৃথিবীর সকলের জন্যে পথপ্রদর্শক। মুসলিম বিশ্বেই স্থাপিত হয়েছিল সর্বাধুনিক বিজ্ঞানাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। দুনিয়ার সকল জ্ঞানান্বেষু পণ্ডিতজনেরা ভিড় জমাতেন বাগদাদ, কর্ডোভা, বুখারা, সমরকন্দ ইত্যাদি এলাকায়। কিন্তু কালক্রমে তাদের জ্ঞান গবেষণায় ভাটা পড়ে এবং ধীরে ধীরে তারা পথ নির্দেশকের অবস্থানচ্যুত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে অমুসলিমদের অনুসারীতে পরিণত হয়।

জীবন ও জগতের সর্বক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্যে ইসলামি শরীয়তে নানা বিষয়ে গবেষণার কোন বিকল্প নেই। এ কারণে যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে ইসলামের বিধানকে সতত কার্যকরী প্রমাণিত করতে গবেষণার পথ রচনা করেছিলেন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ। তাদের গবেষণার কারণেই ইসলাম সেইযুগে সর্বক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পেরেছিল।

বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে যেমন বহু ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তদ্রূপ সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে গবেষণা সংক্রান্ত পাঠ্যসূচি। কিন্তু কোথাও প্রত্যাশিত ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা দেখা যাচ্ছে না। কেননা আধুনিককালে গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বিধিবদ্ধ রীতিপদ্ধতি অনুসৃত হয়। অথচ আমাদের দেশের উলামায়ে কিরাম ও ইসলামি গবেষকদের গবেষণায় সেটি

ততোটা প্রতিফলিত হয় না, যার ফলশ্রুতিতে এদেশের গবেষণাকর্মগুলো আন্তর্জাতিক ভাবে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভে পিছিয়ে থাকে।

আধুনিক গবেষকগণ পূর্বসূরি মনীষীগণের সূত্র ধরে ইসলামের মূলনীতি অক্ষুন্ন রেখে কীভাবে বিশ্বস্বীকৃত একাডেমিক পন্থায় গবেষণা করতে পারেন তার রীতি পদ্ধতি ও কলাকৌশল বর্ণিত হয়েছে, “ইসলামি ও আরবি বিষয়ে একাডেমিক গবেষণার রীতি ও পদ্ধতি” গ্রন্থে।

ইসলামি গবেষণা কাজে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে এমন কোন বস্তুনিষ্ট গ্রন্থ বাংলা ভাষায় নেই। এ শুন্যতা পূরণ করছে ড. মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ ও ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন রচিত এ গ্রন্থ। গ্রন্থটি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং এর দ্বারা সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হচ্ছেন এবং ইসলামি ও আরবি বিষয়ে বাংলাদেশে যারা গবেষণা করেন এবং আগ্রহবোধ করেন এই গ্রন্থ তাদের গবেষণার মানোন্নয়নে সহায়তা করবে।

ইসলামি শরীয়তের সকল বিধানকে বিশুদ্ধ গবেষণার মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপনের জন্যে গবেষকবৃন্দ মনোযোগী হবেন এবং ইসলামের চির কল্যাণময় জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে দ্বিধান্বিত জনমানুষের সংশয় দূরীকরণে এই দুদর্শাগ্রস্ত জাতির পক্ষে কিছু ব্যক্তি মহান আল্লাহর সেই বাণী “কেনো তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোক দীনের পাণ্ডিত্য অর্জনে বের হয় না, যাতে তারা ফিরে এসে জাতিকে দীনের সঠিক জ্ঞান দিতে পারে” এর নির্দেশনা পালনে আত্মনিয়োগ করবেন, আমরা এই প্রত্যাশা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কুবল করুন এবং লেখকদ্বয় ও সংশ্লিষ্ট সকলকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদানে আপ্লুত করুন।

বিস্তারিত জানতে দেখুন-ইসলামি ও আরবি বিষয়ে একাডেমিক গবেষণার রীতি ও পদ্ধতি -সূচিপত্র

Scroll to Top