ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এই জীবনব্যবস্থাকে বিন্যস্ত ও কাঠামোবদ্ধ করেছে ফিকহ। বস্তুত এর মাধ্যমেই শরীয়তের মৌলিক উৎস ও প্রামাণ্য দলীলগুলো থেকে ইসলামের সামগ্রিক বিধিবিধান জানা যায় এবং নতুন নতুন সমস্যার শরীয়তসম্মত সমাধান উদ্ভাবন করা যায়। সাধারণত ফিকহের কাজ হলো, শরীয়তের স্বীকৃত মূলনীতি ও দলীলগুলোর ভিত্তিতে প্রমাণ পেশ করে বিধান সাব্যস্ত করা। তবে শরয়ী মূলনীতি ও দলীল থেকে বিধান প্রমাণের অনেক ক্ষেত্রে মুজতাহিদগণের উপলব্ধি এক রকম হয় না। ফলে ফিকহের বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন মত ও পন্থা। ফিকহ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হলে দলীলগুলোর মধ্যে শরীয়তের সর্বস্বীকৃত মূলনীতি ও মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোনটি অগ্রগণ্য, কোনটি শক্তিশালী ও ত্রুটিমুক্ত এবং কোনটি দুর্বল ও ত্রুটিযুক্ত প্রভৃতি জানা এবং একটির সাথে অপরটিকে তুলনামূলক যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যালোচনামূলক এই অধ্যয়ন প্রক্রিয়ার নামই হলো )الفقه المقارن( তুলনামূলক ফিকহ। ইসলামী শরীয়াহকে বর্তমান যুগের গণমানুষের কাছে বোধগম্য ভাষায় অধিকতর যুক্তিপূর্ণ ও কল্যাণজনকভাবে উপস্থাপন করাই হচ্ছে তুলনামূলক ফিকহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য যে, ফিকহের উৎপত্তির পর থেকে প্রত্যেক যুগেই বিজ্ঞ মুজতাহিদ ও ফকীহগণ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। সাম্প্রতিককালে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয় যেমন আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং অনুসন্ধিৎসু লোকেরা বন্ধ্যত্ব ও অন্ধত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাস্তবতা ও সত্যের কাছে পৌঁছার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি ইসলামী ফিকহ ও উসূলুল ফিক্ নিয়েও চিন্তা গবেষণা চলছে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তুলনামূলক ফিকহ’ নামে স্বতন্ত্র বিভাগ খোলা হচ্ছে এবং এটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের একটি আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ, ফিকহ, শরীয়া অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগ এবং মাদরাসা শিক্ষায় ফাযিল শ্রেণীতেও তুলনামূলক ফিকহ সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। কিন্তু এসম্পর্কে আরবিতে প্রচুর কিতাবাদি থাকলেও বোধগম্য ভাষায় বাংলায় কোন ডকুমেন্টারি গ্রন্থ নেই। বলা চলে বাংলায় এসম্পর্কিত গ্রন্থের শূন্যতা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিদগ্ধ প্রফেসর ড. আহমদ আলী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও উৎসাহী পাঠকদের এই শূন্যতা পূরণে উদ্যোগী হয়েছেন। এজন্য আমরা তাঁকে মোবারকবাদ জানাই।
লেখক এ গ্রন্থে অধিকাংশ ইজতিহাদী বিষয় ফিকহী গ্রন্থসমূহের আদলে ৮টি অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। ভূমিকায় তিনি এ সম্পর্কে সবিস্তর বর্ণনা দিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি কওমী মাদরাসার দাওরা সনদকে বাংলাদেশ সরকার আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ এর মাস্টার্স এর মান দিয়ে আইন পাস করেছে। এর ফলে আশা করা যায়, কওমী মাদরাসার ডিগ্রীধারীগণও একাডেমিক গবেষণায় ব্রতী হবেন। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যেও গবেষণামূলক অধ্যয়নের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কওমী মাদরাসায় উচ্চতর ডিগ্রী হিসেবে যারা ইফতা পড়েন আশা করি তাদেরকেও এ গ্রন্থ পথ নির্দেশ করবে।
এ গ্রন্থ ইসলামী শরীয়া সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সকলের জন্যেই উপকারী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মহান আল্লাহ সবাইকে তাঁর বিধান অনুধাবন ও পালনের তৌফিক দান করুন। আমীন।
বিস্তারিত জানতে দেখুন-তুলনামূলক ফিকহ সূচি