ইলমুল ফিকহ : সূচনা বিকাশ মূলনীতি

Spread the love

ইসলামী আইন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর-এ ব্যাপারে নিষ্ঠাবান মুসলিমদের মধ্যে কোন সংশয়ের অবকাশ না থাকলেও বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণার ধারক-বাহকগণ এ ব্যাপারে সংশয় পোষণ করেন। তাদের এই সংশয় অজ্ঞানতা বশত এবং অগভীর চিনাড়া ফসল। বস্তুবাদী চিনার নিরীখে তৈরী আইন যে সর্বক্ষেত্রে সকল মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে না, এর নজীর সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হচ্ছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম থেকে নিয়ে অন্ত হিজরী একাদশ শতাব্দি পর্যন্তইসলামী আইনের সর্বজনীন কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা অব্যাহত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শিল্পবিপ্লবের ঢেউ সারা বিশ্বে আছড়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে তুরস্ক কেন্দ্রিক মুসলিম শাসনব্যবস্থায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। সেই সাথে ইজতিহাদ তথা আইন গবেষণা কাজেও ভাটা পড়ে এবং স্থরিবতা দেখা দেয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিকার হয় গোটা মুসলিম বিশ্ব। অমুসলিম শাসকদের নিষ্পেষণের শিকার হন মুসলিম স্কলার ও ইসলামী আইন। স্পিঘ্নিত হয়ে পড়ে ইসলামী আইনের ইজতিহাদী গবেষণা। এর ফলশ্রুতিতে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে ইসলামী আইনের উজ্জীবনী শক্তি। অথচ মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা-ইসলামী আইন কেয়ামত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং সকল মানবতার জন্যই এই আইন আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত।

ইসলামী ফিকহ ও উসূলে ফিকহ সম্পর্কে বাংলা ভাষায় যে কয়টি পাঠ্যপুস্কৃ অনূদিত হয়েছে সেগুলোর বিন্যাস ও আলোচনা যথেষ্ট জটিল ও দুর্বোদ্ধ। তা ছাড়া আরবী মাধ্যমে পড়ুয়া ছাড়া এগুলোর মর্মোদ্ধার অনেকের পক্ষেই কঠিন। এ বিষয়টি সামনে রেখে উপমহাদেশের প্রখ্যাত গবেষক-আলিম মাওলানা তাকী আমিনী কর্তৃক রচিত “ইসলামী ফিক্ কি তারিখী পাছে মানজার” গ্রন্থটি “ইসলামী আইনের ঐতিহাসিক পটভূমি” নামে বঙ্গানুবাদ প্রকাশে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। ইসলামী সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম দিকপাল মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নান তালিব এটির বঙ্গানুবাদ করেছেন। তিনি এ কাজটি করেছিলেন প্রায় তিন দশক আগে। অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার কারণে অনেক জায়গায় পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধার দুরূহ ব্যাপার ছিল। তা ছাড়া একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশের লক্ষ্যে সম্পাদনার নামে পান্ডুলিপি এভাবে মসিলিপ্ত করা হয় যে, অপসম্পাদনার কবল থেকে পুনরস্কার করে তা প্রকাশের জন্য আবদুল মান্নাত তালিব নিজেই কাজ শুর করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থতাজনিত কারণে তাঁর পক্ষে বেশীদূর এগুনো সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে ল’ রিসার্চ সেন্টার-এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শহীদুল ইসলাম তার উসাদের কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সংস্থার গবেষণা কর্মকর্তা শাহাদাৎ হুসাইন খান। এরা দুজন কুরআন-হাদীসসহ গ্রন্থে উল্লেখিত উদ্ধৃতি গুলো যাচাই করে তথ্যসূত্র বস্তুনিষ্ঠ করার জন্যে অক্লাড়পরিশ্রম করেছেন। ফলে গ্রন্থটি প্রকৃত অর্থেই উসূলে ফিরে একটি বস্তুনিষ্ঠ ডকুমেন্টারি ও সহজবোধ্য গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষায় উসূলে ফিরে গ্রন্থের তালিকায় এটি একটি যুগান্ত্বারী সংযোজন।

কোন মূলনীতির আলোকে আধুনিক সমস্যাবলীকে ইসলামের আলোকে সমাধান করতে হবে এবং আইন রচনা ও গবেষণার পদ্ধতি ও পন্থা কী হবে, সুন্দরভাবে এ গ্রন্থে তা বিবৃত হয়েছে। ফিকহী পরিভাষাগুলোর অনুবাদের ক্ষেত্রে আবদুল মান্নান তালিব যে দক্ষতা ও প্রাজ্ঞতার স্বাক্ষর রেখেছেন তা নিঃসন্দেহে তার উঁচুমানের পােিত্যর স্বাক্ষর বহন করে। এ গ্রন্থ আইন, ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী ফিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং গবেষক ও ইসলামী আইন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী সকলমহলের জন্যেই উপকারী একটি অনন্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আল্লাহ তা’আলা লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক ও এর প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং এই প্রচেষ্টাকে কবুল কর’স-এই আমাদের আকুল প্রার্থনা।

বিস্তারিত জানতে দেখুন-ইলমুল ফিকহ সূচনা বিকাশ মূলনীতি -সূচিপত্র

Scroll to Top