(পরম করুণাময়, অত্যন্ত দয়ালু আল্লাহ তা’আলার নামে আরম্ভ করছি।)
বিভিন্ন রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু নাগরিক, বিশেষ করে যারা একটি আদর্শিক রাষ্ট্রে বসবাস করছে; কিন্তু ঐ রাষ্ট্রের আদর্শ মেনে চলে না, তাদের সাথে আচরণ বর্তমানে একটি জ্বলন্ত আলোচ্য বিষয়। একটি ইসলামী রাষ্ট্র যদিও ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক, তবুও এই রাষ্ট্র তার অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণু ও উদার। এর কারণ হচ্ছে, ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষা। ইসলামের আসমানী কিতাব আল-কুরআন অমুসলিমদের পরিপূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে। ইসলাম জবরদস্তি করে কাউকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করাকে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে, সেই সাথে অমুসলিমদের সাথে ন্যায়সঙ্গত ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করার জন্য নিজের অনুসারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছে। কুরআন অমুসলিমদের ব্যক্তিগত বিষয়াদিতে, বিশেষ করে সমাজ এবং বিচার সম্পর্কিত স্বাধীনতা অনুমোদন করেছে। রাসূলুল্লাহ স. তাঁর অনুসারীদের এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী যিম্মীদের (অমুসলিম নাগরিক) সাথে যদি তারা নিষ্ঠুর এবং অন্যায় আচরণ করে, তাহলে তিনি স্বয়ং শেষ বিচারের দিন তাদের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করবেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ স. তাঁর মৃত্যুশয্যায় এ কথা উল্লেখ করেছেন বলে বর্ণিত হয়েছে,
احفَظُونِي فِي ذِمَّتِي
অমুসলিম প্রজাদেরকে আমার দেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে অব্যাহত রাখো।
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ইসলামী রাষ্ট্রে বংশ, বর্ণ, জাতীয়তা, ভাষা, গোত্র বা ধর্মভিত্তিক সর্ব প্রকার শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈষম্য বিলুপ্ত করা হয়েছিল। মদীনায় ৬২২ ঈসায়ী সালে রাসূলুল্লাহ স. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদেরকে দেয়া হয়েছিল পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং জীবন, সম্পদ ও সম্মানের পূর্ণ নিরাপত্তা। তাঁর জারিকৃত মদীনা সনদের ন্যায় দলিলপত্রে ইহুদীদের এই সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আর তাঁর প্রেরিত চিঠির মাধ্যমে এ অধিকার প্রদত্ত হয়েছে নাজরানের খ্রিস্টানদের। সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ স.
এবং তাঁর অব্যবহিত পরবর্তী খলীফাগণ কর্তৃক স্থাপিত গৌরবময় দৃষ্টান্ত পরবর্তী মুসলিম শাসকদের জন্য আচরণ-বিধি তৈরি করেছে। এভাবে ইসলামী রাষ্ট্র কর্তৃক অমুসলিমদের সাথে দয়ার্দ্র আচরণ ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি মানবেতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়। অপরদিকে ইসলাম বিরোধীদের দ্বারা অমুসলিমদের ব্যাপারে মুসলিমদের সম্পর্কে অনেক বৈরী প্রচারণা করা হয়েছে। দাবী করা হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে ইসলাম হচ্ছে একটি পরমত অসহিষ্ণু ধর্ম, যা বিশ্বাসজনিত কারণে অমুসলিমদের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করে থাকে। বলা হয়ে থাকে, মুসলিম শাসকগণের হাতে সংখ্যালঘুগণ অশোভন আচরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই শাসকরা তাদের উপর জিযিয়া আরোপ করে, যা ন্যায়সঙ্গত নয়। এ সকল সমালোচকের মতে, অমুসলিম সংখ্যালঘুরা ইসলামী রাষ্ট্রে বহুবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হয়।
এ বইটি লেখা হয়েছে অনেকগুলো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। প্রথমত, লেখা হয়েছে ইসলামের বিরোধীদের দ্বারা অমুসলিমদের প্রতি মুসলিমদের আচরণ সম্পর্কে অসত্য প্রচারণার অবসান ঘটানো। দ্বিতীয়ত, অমুসলিম সংখ্যালঘুদের এই ভীতি দূর করা যে, মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অধিকার খর্ব করা হবে। তৃতীয়ত, অমুসলিমদের সাথে আচরণের ব্যাপারে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা। চতুর্থত, ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম শাসকদের সংখ্যালঘুদের সাথে আচরণের প্রকৃত স্বরূপ উপস্থাপন করা এবং পরিশেষে, আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের সংবিধানে অমুসলিম সংখ্যালঘুদেরকে যে সব অধিকার দেওয়া উচিত, সেগুলোর রূপরেখা তুলে ধরা। এ লক্ষ্যসমূহ বইটিতে কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা এর পাঠকবৃন্দই ভালোভাবে বিচার করতে পারবেন।
বক্তব্যের সমাপ্তি টানার পূর্বে আমি আমার সহধর্মিণী ও সন্তানদেরকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবো, যারা এ বইটি লেখার জন্য আমাকে অবকাশ দিয়েছেন। আমি অবশ্যই আমার কৃতজ্ঞতার ঋণ স্বীকার করবো ঐসব লেখক ও বিজ্ঞজনের; এ বইটি রচনার ক্ষেত্রে যাদের অমূল্য লেখা থেকে অপরিসীম সাহায্য পেয়েছি।
বিস্তারিত জানতে দেখুন-ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার -সূচিপত্র